চিত্রঋণ : André Derain |
কবিতার মতো কিছু
১.
সমান্তরাল অসমানের গল্প
রুটি
আর চাঁদের মাঝখানে দৃষ্টিকে সমান্তরাল করতে চাইলে একটা রেল ছুটে যায়... দীর্ঘ
থেকে দীর্ঘতর হয়ে দিঘির ভিতর দিয়ে কোনো দিঘায়। অথচ '=' চিহ্নটা আসে না। ঠক্ ঠক্ করে দরজায় ঠোকা দিলে পিংপং বলেরা ইনসুইং করে ফিরে আসে
কানের মিডল স্ট্যাম্পে।
আউট
হওয়া ব্যাটসম্যানকে দেখি। বাইশগজ সাড়ে তিন হাত হয়ে ভেংচি কাটে। ঢেউয়ের
ভেংচিগুলো মজা করে ভিজিয়ে দেয় মোজা। শীতের ওপর এক চিমটে নুন দেওয়া আয়োজন। রুটি
ফুলে ওঠে। গ্যালারিতে হইচই।
মোবাইলে
ঠিক তখনই বেজে ওঠে রিংটোন- "রাগ যে তোমার মিষ্টি আরও অনুরাগের চেয়ে, সাধ করে
তাই তোমায় রাগাই ওগো সোনার মেয়ে..." এই পর্যন্ত মিসকল থামে। দিঘিময় চাঁদ হাসে। মোবাইল নিয়েই এক
ক্লিক। ঢিলের মতো একটা লজেন্স। মুখে ঢুকেই রুটি।
রেল
চেবাই দুলতে দুলতে। '=' পাতে। অথচ সরলটা অসহায় সংখ্যাগুলোকে নিয়ে আরও বদহজম অঙ্ক
রেলপাতের অভাবে। সারাদিনের উপবাসে ধীরে ধীরে চুঁয়া পড়ে গল্পে। লাল-সবুজ
সিগন্যালে প্রকট হয় অন্ধকারের মাঝে হেঁশেল আর ছাউনিহীন হেঁশেল। কানে যেন দুল।
দুলে দুলে বাড়ে... গাডার যেন, খাঁচা ও পাখির গল্পকে আঁটতে-
২.
মৃত্যু - অমৃত্যু
গতকাল
রাতে আমার মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তবু আমার কিছু হয়নি। এখন পর্যন্ত
মৃত্যুগুলো পাথর। রাতগুলোও পাথর। আবহবিকারে জড়ানো আমার একটা পাহাড়। আর নীল
প্রজাপতি দুটো পাথর থেকে পাথরে মধুর জন্য। পরাগমিলনও বা।
প্রজাপতি
দুটো নষ্ট হতে পারে। প্রজাপতি দুটো স্পষ্ট হতে পারে। সিঁড়ির পর সিঁড়ি এইভাবে
অ্যাশট্রের চারপাশে প্যাঁচের মতো সমুদ্র ফুটছে। দুধ ফুলছে। ছাইও ধোঁয়ার আগের দুধ।
টুইঙ্কেল
টুইঙ্কেল বুদবুদে বাটির গায়ে সর জমছে। সাদা থেকে হলুদ, হলুদ থেকে লালচে
অভিব্যক্তিতে পাপড়িরা ঢুলু ঢুলু ঢলানি ঢলানি। কেউ বলে নক্ষত্রের শাঁস, কেউ বলে
জন্মের, কেউ বা...
বাটিতে
এইসব খুচরো, নগরের পথে পথে কিনারা জুড়ে। পাহাড়টা প্রস্ফুটিত হচ্ছে। আর একটা হাঁস
পাহাড় সাঁতরাচ্ছে। পাথর থেকে হাঁসেরা, হাঁস থেকে পাহাড়েরা...
৩.
আধার√আঁধার
দুয়ারের
হোল্ডারে এখন মাকড়সার বাসা। ঘন কুয়াশার মতো কোনো কাব্য। চারপাশে টিকটিকি ঘোরে
সময়ে সময়ে। ঢেউয়ের আছাড় খাওয়া ছন্দে মাতে সমুদ্রসৈকত। আলো জ্বলে না তবু।
সূর্য
ওঠে। সূর্য ডোবে। খোলসের ভিতরে ঘড়ি ডোবে না। মায়ের ফুঁ'য়ে শাঁখ বাজলে সুইচ
টিপি। তড়িৎ যায়-আসে ব্রেকিং নিউজে। ফলাও করে ছাপা হয় সংবাদ মেক-আপের মতো।
শব্দের পালকে বানিয়ে ফেলা কর্ক যেন। র্যাকেটে র্যাকেটে ঘা খেতে খেতে ওড়ে। ঘি
দেয় না তবু কেউ। শীতের গরম ভাতে ধোঁয়া উড়তে উড়তে ঠাণ্ডা হয়ে যায় দিন।
কাটা
ফিলামেন্টকে ধর্ষিতা নারী মনে হয়। তড়িতে ঝলসে যাওয়া পাখি। বাল্বের মধ্যে সে
উড়ত, জ্বলত আকাশ পেরিয়ে আরও আরও আকাশ। আজ আর আলোকিত হয় না। এখন তার লাশ ঘিরে
সেই কাঁচ, যাকে সে টপকে যেত। আজও টপকাচ্ছে। তবে কেবলমাত্র মোসুম্বির রস, মোসুম্বি
না।
টপ্
টপ্ শব্দ... টপ্ টপ্ না টিক্ টিক্? আঁধারকে টপকে আধারটা আসছে না হাতে। পিপাসা
মাত্র। ঘড়িটা মাত্র। হোল্ডারটা মাত্র। দুয়ারটা মাত্র। মাতৃদেশে এখন ছবিহীন আমরা।
কথাহীন আমরা। আর ঠোঁট মোসুম্বির টপ্ টপ্ টিক্ টিক্ টক্...
৪.
হ্যারিকেন × চাবিকাঠি
হলুদের
সঙ্গে আঁধারের কেলির মাঝে একটা কমা। মৃতের আঙুল বা। আবছায়া দেওয়াল। মাইনাস
পাওয়ারের কাছে এইটুকুই। পাহাড় না। তাই গড়ানোও নেই। করমর্দনও নেই। কেবল সেই
আঙুলে হ্যারিকেন ঝুলিয়ে দিই।
ছোটবেলার
সেই হ্যারিকেনটা মনে পড়ে। ইচ্ছেমতো তার কান মুলতাম। সে জিভ বাড়িয়ে ভেংচি করত।
এইভাবে সিঁড়ির পর সিঁড়ি টপকে এক কোমর জলে নেমে মাছ খুঁজতাম। বইয়ের মধ্যে
জলকন্যা হেসে উঠত। এখন সেই হ্যারিকেন ছোপ ছোপ দেওয়ালের খোপগুলো খুলে দিচ্ছে।
পায়রারা উড়ছে বকম্ বকমে...
দিন
নয়। এখন রাত্রিই। পিঁপড়ের চেয়ে অনেক বড়ো সে পাখি। পালকে পালকে তার বকম্ বকম্। সেও দানাশস্য খুঁটে খায়। দাবার ঘুঁটি হাতে দান ভুলে যাওয়া
কৈশোরের এইরকম কত লতা বেড়াটাকে ঢেকে দেয় বনঝোপে। তাই চড়ে গিরগিটি আসে যায়।
বকম্
বকমে আর একটা মৃতের আঙুল ফুটে ওঠে। ফুল নয়। দুধও নয়। একটা কমা, চাঁচির মতো একটা
চাবিকাঠি ধরে। চাবিকাঠি চিনলেও চাবিকাঠিটা অচেনা।
মায়ের
আঁচলের চাবিকাঠিতে গোয়ালের গন্ধ বা সিন্ধুসভ্যতার একতলা-দুতলা ঘর আর নেই। পায়রার
আঁচড়ে হিজিবিজি প্যাস্টেলে তবু একটু আলো, আর এক কমা'র মাঝে চাবিকাঠি জাগে। এইভাবে
জেগে হ্যারিকেন ও চাবিকাঠি দুই আঙুলে এক লাঙল। চাষ দেয়...
অ-এ
অজগর থেকে বেড়ে ওঠে এক একটা গাছ। জমি জুড়ে। শিকড়ের ওপর শিকড় জমে কাঁচ কালো
হয়, সিঁড়িগুলো ভ্যানিশ্ করে... অজগর থেকে গাছ, অজগর থেকে গাছ...
মাছ
বা কমা'র খোঁজে আমাদের জলকন্যা পাহাড়। এইভাবেই চাষাবাদ জুড়ে কমা খুঁজে চলা, বকম্
বকমের নীচে মানিয়ে নেওয়া নখেল আঙুল... আর লাঙল লাঙল চাবিকাঠির দেওয়ালে পদ্মানদী
ও জোনাকি নৌকার আখ্যান-
৫.
পোস্টমাস্টার ও রতন
'পোস্টমাস্টার'
গল্পের সেই রতনটা এখন ফেনিত সাবানজল। মগের মধ্যে ফুটফাট ফাটে। মগের মধ্যে। একটা নল
ডুবিয়ে ফুঁ দিলে বুদবুদ বল ওড়ে। রঙীন রঙীন লাগে সেই সব বল। কেউ ফুঁ দেয়। কেউ
ফাটায়। কতগুলো বা বাতাস হয়ে যায়।
সেই
সব বাতাস থেকে বাতাসাদের টেনে বের করে; পোস্টবাক্সে ফেলে পিওন চলে যায়। এক যুগ
পেরিয়ে এক সমুদ্র। এক সমুদ্র পেরিয়ে এক বালুচর। চুড়ির মতো কিশোরী কুয়াশা
আবৃত্তি করতে করতে...
বিন্দুর
চেয়ে কোনো বড়ো জ্যামিতিক নেই জেনেও আবৃত্তিকে কেন্দ্র করে কম্পাস ঘোরে। বৃত্তের
বাইরে বৃত্ত। তার বাইরে বৃত্ত। তারও বাইরে...
এইভাবে
এক ঢিল, দুই ঢিল, ঢিলঢিলে করে দেয় পুকুর। বোতাম ছিঁড়ে এক পুকুর খুলে পড়ে। দুই
পুকুর... মৎস্যকন্যারা খাটে শুয়ে পড়ে নগ্ন হয়ে। টাইটানিকের সেই নায়িকা যেন।
মগের সাবানজল ছুঁড়ে মারতে, বুদবুদ চুষে নেয় তাসঘর। পোস্টমাস্টার হয়ে কেউ কেউ
ছবি আঁকে...
রতন
বরফ হয়ে ওঠে সেই টাইটানিকের আগে...
No comments:
Post a Comment