একটি বিপ্লব
এমন কিছু বিষয় আছে আমাদের বিশ্বে, যেগুলো আমরা এখনো
অন্ধকার ঘরে ভরে রেখেছি , জানলাগুলো বন্ধ করে রেখেছি পর্যন্ত,যাতে আলো না ঢোকে এবং
তেমনি বিষয় হচ্ছে যৌনতা।
যৌনতা নিয়ে আজো নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, চলচ্চিত্র থেকে সাহিত্য থেকে সংস্কৃতি
সর্বত্র শ্লীল-অশ্লীলের খেলা চলছে কিন্তু যৌনতাও
যে বিপ্লবের রূপ দিয়েছিল,বলা ভালো দিয়েছে কারণ আজো চলছে বিভিন্ন দেশে গণজাগরণের মধ্যেই
হোক কিংবা নিজস্ব পরিসরেই হোক ,এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হবে যৌন বিপ্লবের ইতিহাস, সাহিত্য,
চলচ্চিত্রে, সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা ,তবে যেহেতু এটি ধারাবাহিক রূপে
প্রকাশিত হবে তাই এই কিস্তিতে বিশ্বসাহিত্যে তথা ভারতীয় সাহিত্যে যৌনতার প্রভাব ব্যাখা
করা উদাহরণ মাধ্যম-ই হবে মূল লক্ষ কিন্তু তার আগে বিশেষ ভাবে যৌনতার এই বিপ্লব কিংবা
উদারীকরণ ,এর ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করা ভীষণ ভাবে জরুরি ,তাই সেই চিত্র সংক্ষেপে তুলে
ধরলাম এই লেখনীতে।
আজ থেকে অনেক বছর
আগে যৌনতা নিয়ে বিপ্লব শুরু হয়েছিল আমেরিকার মাটিতে কিন্ত বিপ্লবের থেকে উদারীকরণ -ই হয়ে উঠেছিল মূল মন্ত্র এবং
সাহিত্য, চিত্রকলা , ইত্যাদিতে তার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
এইখানে বলে রাখা ভালো এইসবের শুরু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর,সময়টাকে বলা হত "রোরিং টয়েন্টিজ"(roaring
twenties) এফ.স্কট ফিটজেগার্ড, এডনা সেন্ট, ভিনসেন্ট মিলে এবং আর্নস্ট হেমিংওয়ে ছিলেন উল্লেখযোগ্য কিছু লেখক এই
সময় কিন্তু ভারতের বুকে আরো আগে তবে ঠিক বিপ্লবের রূপ নেয়নি, যৌনতার প্রতি ভারতীয়
মনোভাবের আপাতভাবে বিদ্যমান অসঙ্গতি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
প্রথমত সংস্কৃত সাহিত্যচর্চার মাধ্যমেই ভারত যৌনতার ইতিহাসে অবদান রেখেছে, যেখানে যৌনসঙ্গমকে
বিবেচনা করা হয়েছে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে; যা নতুন প্রজন্মের যৌন মনোভাবের দর্শন ভিত্তিকতার
কেন্দ্রবিন্দু। এটা বেলা যেতে পারে যে, ভারতের শিল্প এবং সাহিত্যের মাধ্যমেই যৌনশিক্ষার
প্রবর্তন ঘটেছে। ভারতের প্রায় সব সমাজে, সাধারণ মানুষ এবং শক্তিশালী শাসক গোষ্ঠির
মধ্যে যৌনচর্চার পার্থক্য বিদ্যমান ছিলো। ভোগসর্বস্ব জীবনধারায় ক্ষমতাশীল ব্যাক্তিদের
এক্ষেত্রে কোনো সাধারণ নৈতিক মনোভাব ছিলো না।
ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে যৌনতা বিষয়ক বিপ্লবের ওপর কিছুটা
আলোকপাত করা পর,এবার এই কিস্তি শুধুমাত্র যৌনতার সাহিত্যভিত্তিক তাই সাহিত্যের
অন্দরমহলে অবাধ বিচরণই হবে মূল লক্ষ্য এবং তা তুলে ধরবো আমার লেখনীতে ।
-সাহিত্য-
যৌনতা নিয়ে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল তা বিশ্বসাহিত্যেও
প্রভাব ফেলে ভীষণ ভাবে ,সময় যখন বয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে, ষাটের দশকের কালজয়ী
কিছু সাহিত্যকর্ম যেমন-
"আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ" ,"রোজমেরিজ বেবী" এবং
"টু কিল আ মকিং বার্ড" যেন পরিবর্তনের ঢেউ নিয়ে এল,ধাক্কা মারলো আমাদের পড়ার
পুরোনো রীতিনীতির ওপর ,এই পরিবর্তন শেখালো যদি ঠিকমতো আমরা আমাদের কাল্পনিক জগৎকে চালিত
করি,তবে শিল্পের নবউন্মোচন হবে আমাদের হাত ধরেই , তবে এর বহু আগে যৌন বিপ্লব যখন পূর্ণ
গতিতে চলছে তখন নতুন ভাবে আবার একটা পালক যুক্ত হলো সাহিত্যে এবং যৌনবিপ্লবে একটি বই প্রকাশের মাধ্যমে , ১৯১৮-তে লেখা মেরী স্টপস-এর
"ম্যারেড লাভ" , বইটির মাধ্যমে নারীর যৌন ইচ্ছার কথা প্রকাশ করা হয়েছিল,যা
সেইসময় বিতর্কিত একটি বিষয় এবং বহু প্রকাশনা সংস্থা ছাপাতে নারাজ ছিলেন ,কিন্তু যখন
প্রকাশ পায় তখন বিক্রয়ের লাভ আকাশছুঁয়ি,এবং শতাব্দীর সবচাইতে আলোচিত বই হিসেবে গণ্য
করা হয় ।
১৯৩৪ সালে হেনরী মিলারের
"ট্রপিক অফ ক্যানসার" আবার
এক আলোরণের সৃষ্টি করে ,এটি এমন একটি উপন্যাস যা আদিতে অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হলেও
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে একটি মার্কিন ধ্রুপদী সাহিত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এতে মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং যৌনকর্মের দ্বিধাহীন বর্ণনা থাকায় প্রকাশের পর সমালোচনার
ঝড় উঠেছিল এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ বছর নিষিদ্ধ থাকে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে
বইটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হলে বিষয়টি
আদালত পর্যন্ত গড়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তাদের ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের
রায়ে উপন্যাসটিকে অশ্লীলতার দায় থেকে অব্যহতি প্রদান করে। নরম্যান মেইলার-এর মতে
ট্রপিক অফ ক্যান্সার বিংশ শতাব্দীর ১০-২০টি সর্বাগ্রেগণ্য উপন্যাসের অন্যতম। মডার্ন
লাইব্রেরির বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত ।
পরপর এই ধাক্কার জন প্রস্তুত ছিলনা এবং তা আবার ঘটে গেল ১৯২৮ সালে ডি.এইচ.
লরেন্সের লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার-এর মাধ্যমে, এই উপন্যাসেরর মূল হল যৌন জীবনে অতৃপ্ত , অসুখি উচ্চবর্গের এক নারী আর
তারই বেতনভোগী এক নিম্ন শ্রেনীর কর্মচারীর দেহগত
মিলনের ব্যাপারগুলো নিয়ে লেখা ,সেই নারীর
ধনী কিন্তু পক্ষাঘাতগ্রস্থ স্বামী ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লীর কাছে পার্থিব জৌলুসের
সব পেয়েও একজন স্ত্রীর যে আরো কিছু চাহিদা থাকে তা পুরণের বর্ণনা কাহিনীতে , যুদ্ধের
আঘাতে নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত নিয়ে বেচারা ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লী দেহগত সুখ হয়তো দিতে
পারেননি স্ত্রী কন্সট্যান্স চ্যাটার্লী (লেডী চ্যাটার্লী) কে কিন্তু মনোগত সুখ দিতেও
তার কার্পন্য লেডী চ্যাটার্লীকে ঠেলে দিয়েছে সেই পথে ,যে পথ সমাজ স্বীকৃত নয় বরং ধিক্কারের
। দেহগত সুখ পেতে যিনি ক্ষণিকের জন্যে বেছে নিয়েছিলেন ক্লিফোর্ড ষ্টেটের গেমকীপার অলিভার
মেলর্সকে আর সেখান থেকেই শুরু , জীবনের ইচ্ছেগুলো
আর পরম আকাঙ্খিত সুখটুকুর সব পেয়েছেন অলিভার মেলর্সের কাছ থেকে , নিজেকে পূর্ণ মনে
করেছেন তিনি । উপলব্ধি করেছেন সব মানুষের জীবনের পরম সত্যটি ,শুধু মন নিয়ে বেঁচে থাকা
যায়না , চাই দেহগত সতেজতাও এবং সম্ভোগের উত্তুঙ্গ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছেন, শুধু
মানসিক নৈকট্য নয় ভালোবাসা হতে পারে দেহের চড়াই উতরাইয়ে সাঁতার কেটেই ।
শুধু এক সুরে বাঁধতে হবে দুটোকে এবং তাই ভালোবেসেছেন মেলর্সকে আর সেই ভালবাসা,
ভাললাগার কথা বলা হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন মাত্রায়।
ইংরেজরা ফরাসিদের বৈপ্লবিক রাজনীতি ও যৌনসাহিত্যকে ভয় পেত বরাবর কিন্তু
১৭৪৮ সালে তারাই তাদের প্রথম উল্লেখযোগ্য যৌনসাহিত্য পেয়ে যায় , জন ক্লেল্যান্ডের
মেমোয়ার্স অব এ ওম্যান অব প্লেজার, পরে ফ্যানি হিল নামে পরিচিত এ-হলো হলো সেই উপন্যাস
যা ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার পুনঃমুদ্রিত ও অনূদিত হয়। তবে দুই শতক
ধরে এটার প্রকাশনা বেআইনী ছিল, ইংল্যান্ডে কেবল ১৯৭০ সালে প্রথম উপন্যাসটি আইনী আওতায়
প্রকাশিত হয়।
উপন্যাটি যৌনতার জয়গান করে আর সমাজ ও ধর্মের চাপিয়ে দেওয়া নৈতিকতার পাহাড়কে
আঘাত করে ক্রমশ ,এই উপন্যাসটি মূলত জনৈক 'ম্যাডাম'-এর কাছে উত্তম পুরুষে লেখা ফ্যানির
পত্রাবলি, যাতে ফ্যানির নানা যৌনকেলেঙ্কারির স্বীকারোক্তি বিধৃত হয়ে রয়েছে কিন্তু তার
এই দুঃসাহসিক দুষ্কর্মের স্বীকারোক্তিতে ফ্যানির কোনো অনুশোচনা নেই, বরং পাঠককে যৌনপুলক
দেবার মাধ্যমে সেসবের জয়গান গাওয়া মূল উদ্দেশ্য এবং ক্লেল্যান্ড তার উপন্যাসে যৌনাত্মক পরিভাষা নির্মাণের
ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বা পথের-মুখের ভাষা ব্যবহার না করে রুচিবান ও সৃষ্টিশীল শব্দাবলি
ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। এক পুংদণ্ডেরই তিনি ৫০টি পরিভাষা ব্যবহার করেন। যেমন,
তুষ্টির যন্ত্র (ইন্সট্রুমেন্ট অব প্লেজার)এবং
স্ত্রীলিঙ্গের পরিভাষা হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন 'প্রেমের নরম পরীক্ষাগার'-এর
(সফট ল্যাবরেটরি অব লাভ) মতো পরিভাষা ।
এর বেশ অনেক বছর পর অর্থাৎ ষাটের দশকের মাঝে ,১৯৬৬ সালে জ্যাকলিন সুজান-এর
“ভ্যালি অফ দ্য ডলস” আবার এক বিতর্কের সৃষ্টি করে মাদকদ্রব্য ও যৌনতাকে উপন্যাসের
মূল হিসেবে নিয়ে এসে এবং সেইসময়কার বাস্তব কিছু চরিত্রের সাথে মিল পাওয়াও যায়,তার জেরে
প্রশংসিত ও ধিকৃত দুইই হতে হয় ।
এরপর বেশকিছু তথ্যভিত্তিক যৌনসাহিত্য নির্দেশিকাও আমরা
পাই যেখানে
হেলেন ব্রাউনের "সেক্স আ্যন্ড সিঙ্গেল গার্ল" , জোয়ান গ্যারিটির
"ওয়ে টু বিকাম সেনসুয়াস উওমেন ,যেখানে
মলদ্বারে যৌনমিলনের উল্লেখ আছে এবং অন্যান্য ।
তবে বিশ্ব যৌনসাহিত্যের অনেকটা জুড়েই আছে বা থেকে যাবে "প্লেবয়"
ম্যাগাজিনটি,১৯৫৩ সালে বাড়ির রান্নাঘর থেকে 'প্লেবয়' ম্যাগাজিনের প্রকাশনা শুরু
করেছিলেন হিউ হেফনার, এক সময় এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি
হওয়া 'মেনস' ম্যাগাজিনে পরিণত হয়।
এই ম্যাগাজিনটি যখন সাফল্যের শীর্ষে ছিল তখন মাসে এট সর্বোচ্চ ৭০ লাখ কপি
পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
তাঁর প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এই ম্যাগাজিনটি অনেকে 'অশ্লীল' বা নোংরা মনে
করলেও, অনেকের কাছে এই ম্যাগাজিনটি যৌন বিপ্লবের অগ্রদূত।
বিশ্ব যৌনসাহিত্যের পর আমাদের ভারতবর্ষে তথা বাংলায়
যৌনসাহিত্যের সম্ভার ঈর্ষণীয় না হলেও কম নয়, আমরা সাহিত্যে বাঙালি কবি জয়দেবের
গীতগোবিন্দের উল্লেখ করতে পারি,যদিও তা যৌনসাহিত্য নয় বলে ধরেও নি ,বস্তুত
কৃষ্ণধামালী বলে এক ধরনের সঙ্গীত আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, তা প্রাকৃত ভাষায় গীত
হত,দশম একাদশ শতাব্দীতে গৌড়ের এক লেখকের একটি শ্লোকে বলা হচ্ছে কিভাবে শীতকালে
ভোররাতের সময় রাধাকৃষ্ণের গোপন প্রেমের সুমিষ্ট গান শুনে নাগরিকদের ঘুম ভাঙছে।
জয়দেব এই কৃষ্ণধামালীকেই সহজ সংস্কৃতে এনে তার অমর শৃঙ্গাররসের কাব্য সৃষ্টি করেন।
বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, দোনা
গাজী, দৌলত কাজী, আলাওলের কথা এসেছে, আধুনিক যুগেও সাহিত্যে যৌনতা আছে, বিতর্কও আছে,
সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাসেও কোনো এক চরিত্রের
ক্লাস এইটে পড়ার সময় মাইকেল মধুসূদনের ‘বীরাঙ্গনা কাব্যে’র বীরাঙ্গনার শারীরিক বর্ণনা
শুনে যৌনাঙ্গ ফুলে উঠেছিল এবং সেই দিন তার
প্রথম আত্মরতি , আসলে একটি বয়সের কল্পনাশক্তির
জোর ভীষণ ভাবে রয়ে যায় ।
বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র হীরা মালিনীর সঙ্গে
গোবিন্দলালের সম্পর্কও পাঠকের উষ্ণতার কারণ ,এমনকি কিশোর রবীন্দ্রনাথের কাঁচাহাতে
লেখা কবিতায় ‘তব কুচযুগ নিঙারি নিঙারি’ পড়লেও সমস্ত ইন্দ্রিয় একযোগে ত্রাহি
ত্রাহি রব ফেলে দেবে । ‘বৌঠাকুরানীর
হাটে’র নারী অঙ্গের প্রকাশের বর্ণনা, ‘চোখের বালি’র মহেন্দ্র—বিনোদিনীর সম্পর্ক
উত্তেজনা জাগায়। ‘ঘরে-বাইরে’র সন্দীপের সাথে বিমলার সম্পর্ক কিংবা ‘চার অধ্যায়ে’র
এলার মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ যৌনতা প্রকাশ করেছেন, ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পে সোহিনীর
মেয়ে নীলার মধ্যেও উদগ্র কামনাও প্রকাশ পেয়েছে, ‘চোখের বালি’তে মহেন্দ্র-আশার
বিয়ের পরের জীবন নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, "দিনগুলিকে রাত আর রাতগুলিকে
দিনের মতো লাগিল" ধরনের বাক্যে স্পষ্ট যৌনতার কথা থাকলেও বিনোদিনীর সঙ্গে
মহেন্দ্রের সম্পর্কে ভাষা নেই বললেই চলে এবং সম্পর্কহীন বর্ণনা আরও বেশি করে যৌনতার ইঙ্গিত দেয় আমাদের
,ইন্দ্রিয় জেগে ওঠে ।
কল্লোল যুগে বাংলা কথাসাহিত্যে যৌনতার ব্যাপক প্রয়োগ দেখা
যায় এবং এইসময় সাহিত্যে যৌনতা, অশ্লীলতা ইত্যাদি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী,
কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র
মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ নানা
তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে যান। বুদ্ধদেব বসুর প্রথম উপন্যাস ‘সাড়া’ এখানে
উল্লেখ্যিত কারণ সেখানে তিনি
ফ্রয়েডীয় যৌনমনস্তত্ত্ব সূত্র ব্যবহার
করেছিলেন।
কয়েক দশক পরে এই বুদ্ধদেব বসুই ‘রাত ভোর বৃষ্টি’ উপন্যাসের জন্য আদালতের
কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হলেন।
পরবর্তী সময় সমরেশ বসুর প্রজাপতি ও বিবর-ও সাড়া ফেলে,এই কিস্তির লেখা শেষ
করবো হাংরি জেনারেশনের প্রচন্ড বৈদূতিক ছূতার কবিতার মাধ্যমে যাদের অবদানও যৌনসাহিত্যে
খুব একটা কম নয়-
"প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্থতা"
*পরের কিস্তিতে সিনেমা ও যৌনতা....
(চলবে)
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteচলুক
ReplyDelete