।। বাক্ ১২৫ ।। অন্যভাষার কবিতা ।। সেলিমা হিলের কবিতা ।। অনুবাদ : হিয়া মুখোপাধ্যায় ।।















সেলিমা হিল : ব্রিটিশ এই কবির জন্ম ১৯৪৫ সালে কবিতায় এক অদ্ভুত পরাবাস্তবতাকে ধরার জন্যই খুব সম্ভবত উনি সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত৷ ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় ওনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'সেয়িং হ্যালো অ্যাট দ্য স্টেশন' আজ পর্যন্ত মোট বাইশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে কবি হিসেবে পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার যার মধ্যে ২০০১ সালে প্রকাশিত 'বানি'  কাব্যগ্রন্থের জন্য উইটব্রেড পোয়েট্রি সম্মাননা ২০১০ সালে প্রকাশিত 'অ্যাডভাইস অন ওয়ারিং অ্যানিমাল প্রিন্টস' কাব্যগ্রন্থের জন্য মাইকেল মার্ক্স পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড অন্যতম ব্রিটেনে সিলভিয়া প্লাথের পর খুব সম্ভবত সেলিমা ইসেই কবি যার লেখায় এক স্বাতন্ত্র সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় 'প্রতিটি কবিতাই আসলে প্রেমের কবিতা', সেলিমা ঠিক এই বক্তব্যেই বিশ্বাস রাখেন তার কবিতায় ফিরে ফিরে আসে প্রেম প্রেম থেকে জন্ম নেওয়া হিংস্রতার প্রসঙ্গউল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ' লিটল বুকঅফ মিট', 'ভায়োলেট', 'পোর্ট্রেট অফ মাই লাভার অ্যাজ আহর্স', 'পিপল হু লাইক মি টবলস'





তোমার প্রেমিকার উরু

এই মুহূর্তে আমি যা অনুভব করছি তা খানিকটা
একটা পারিবারিক সেডান গাড়ী আর ইলমাছের অদ্ভুত মিশেল
তোমার প্রেমিকার উরুর
আকার বিন্যাস
দিনরাত আমার উদর গভীরে প্রোথিত হয়ে থাকছে৷

আর আমার জন্মদিনে উপহার স্বরূপ আমি চাই
সোনা আর রূপোয় গড়ানো একটা দীর্ঘ রাস্তা ,
আর গাছগুলো, না হয় পপলারই হোক,
বিন্দুবৎ হয়ে যাক যতক্ষণ না
তোমার প্রেমিকা সে পথ ধরে অবশেষে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে





আমাকে অগ্রাহ্য করুন

আমাকে অগ্রাহ্য করুন
গতরাতে বেশ স্বাভাবিকভাবেই আমি ঘুমোতে গেছিলাম
কিন্তু সকালে উঠে লক্ষ্য করলাম আমি আর আমি নই, বরং অন্যকেউ-
অন্য কেউ যে সারারাত সারারাত আপনার স্বপ্নে বিভোর ছিল
অপরিচিত কারো ফুলের গালিচায় একক ময়ূরীর মতন,
লালসায় ভারী হয়ে ওঠা মাংসের পিন্ডের মতন

অন্যকেউ যে নিজপায়ে দাঁড়িয়ে,
পলাতক দুপেয়ে গন্ডারের মত এখানে ওখানে ধাক্কা খায়,
শুধু মাত্র তার খোঁজে
যে অন্তত সামান্য হলেও
দেখতে,
অথবা শুনতে,
অথবা গন্ধে,
খানিকটা আপনার মতন
তারপর ভুলবুঝে বিড়বিড় করেআমি দুঃখিত
আমি দুঃখিত
দয়া করে আমাকে অগ্রাহ্য করুন




আমার সাথে কথা বলো

আমি থামবো
তারপর আবার শুরু করবো
সিগারেট, চিনিরদলা, মুর্গীরডিম, কেকের টুকরো প্রভৃতি দিয়ে
সুকৌশলে আমি ছোট ছোট স্তূপ তৈরী করবো
আর তোমার যাতায়াতের পথে সাজিয়ে রাখবো ততক্ষণ
যতক্ষণ না তুমি লক্ষ্য করছো;
আর তারপর কিঞ্চিৎ বড় কিছু সামগ্রী,
য্যামন মাছ অথবা ফল অথবা টিউলিপগুচ্ছ
আমি মাথায় ব্যালান্স করে হেঁটে যাবো,
ফিসফিস করতে করতে; তুমি আমার সাথে কথা বলো;
ফিসফিস করতে করতে; দয়া করে তুমি আমার সাথে কথা বলো




আমি সবসময় তোমার কথা ভাবছি

আমি সবসময় তোমার কথা ভাবছিআমি ভাবছি
তোমার পৃথিবীতে নিশ্চিতভাবে রাঁধুনীরা প্রতিদিন রেঁধে খাওয়ায় তোমাকে

আমি ভাবছি, আমার মত কেউ আদৌ তোমার মত কারো জন্য যুতসই নয়
আমি ভাবছি, আমার যাবতীয় ছটফটানি আদতে সহস্র শুয়োরের থেঁতলানো পিটুইটারী গ্রন্থির জন্য

সেইসব শুয়োর যারা প্রতিদিন
শিকাগো, ইলিনয়ের আর্মর প্যাকিং প্লান্টে
জবাই হয়

আর আমার স্বপ্নে তুমি আমায় শিকাগো প্রস্তাব করছো
আর আমার স্বপ্নে আমি মৃত শুয়োরদের পুর্নজন্ম প্রস্তাব করছি




আজকের রাতটা কিসের জন্য?

একজন তুচ্ছ দিদিমা কি
একা ঘরে একটিমাত্র পায়রার সাথে
উড়ান শিখতে পারেন?

একজন তুচ্ছ দিদিমা,
এমনকী যিনি সেকেন্ডহ্যান্ড ট্র্যাক্টরও
মেরামত করতে পারেন,
তিনি কি একজন বিশাল বপুরপুরুষকে
সিমেন্ট কাটারের ঘূর্নায়িত চক্র দিয়ে
সিংকের উপর আমূল দ্বিখন্ডিত করতে পারেন তারপর
আঠেরোটি প্লাস্টিকের পুঁটলিতে সযত্নে সেই দেহাংশ জড়ো করতে পারেন
রক্তের কোনো দাগ না ছেড়েই?
আর একজন তুচ্ছ দিদিমা কি
ভেড়াদের পিছন পিছন পরিত্যক্ত বিমানপোতে হেঁটে বেড়াতে পারেন
কারণ তিনি সদ্য অঙ্কন প্রণালী শিখছেন?
তিনি কি ন্যূনতম সন্দেহ না জাগিয়েই ভেড়াদের
সেই সব ফ্যাকাশে বর্তুল রেটিনাকে ভালোবাসতে পারেন?

আর আমার মত একজন তুচ্ছ সাধিকাসম পবিত্র নাতনির কি
আপনার মত একজন রক্তাক্ত পুরুষের সাথে কোনোভাবে একা থাকাউচিত?

আর আপনি কি বলতে পারেন
আজকের রাতটা ঠিক কিসের জন্য?


No comments:

Post a Comment