।। বাক্ ১২৫।। উত্তম দত্ত।।

চিত্রঋণ : Rembrandt




শ্মশান-বন্ধু
  
শ্মশান-বন্ধু হিসেবে আমার খুব একটা সুনাম ছিল না কোনোদিন। প্রতি মুহুর্তে আমি তোমাকে মরতে দেখেছি বলে শ্মশানের চিতাকাঠকে অর্থহীন অনুশাসন বলে মনে হতো। তুমি লিখেছিলে:

'যে সম্রাট প্রতিদিন নগ্ন হয়ে নীড় খোঁজে আমার নূপুরে,সেতো এক দিশাহীন নিশাচর শিশু। আমার সৌভাগ্য এই, আপনাকে আমি কখনো সেভাবে দেখি নি, না স্বপ্নে, না কবিতায়।'

আমার জীবিত চোখ এই প্রথম শ্মশানে এসেছে তোমাকে বহন করে। এই প্রথম দেখেছে সে,কীভাবে সবুজ ঘাস হামাগুড়ি দিয়ে উঠে আসে অগণন মরণের দিকে।

সম্রাট তোমার মুখাগ্নি শেষ করে শেষবারের মতো তোমাকে দেখে নিয়ে জরিপ করছিল তার সংখ্যাহীন সঙ্গমের স্মৃতি। তোমার চুলের সিঁড়ি বেয়ে তখন ছেলেমানুষের মতো আগুন লাফিয়ে উঠছে আকাশের দিকে। একটু একটু করে পুড়ে যাচ্ছে তোমার ব্যবহৃত হিরণ্ময় বর্ণমালাগুলি। আর খুব নি:শব্দে মুছে যাচ্ছে আমাকে লেখা তোমার অলিখিত চিঠিপত্রগুলি।

অহেতুক ধোয়াঁয় আমার চোখে জল আসছিল।এই প্রথম আমি দেখলাম তোমার পায়ের পাতা,খঞ্জনার মতো,সুশোভন আলতায় স্তব্ধবাক। আগুন তখনও ঠোঁট রাখেনি সেখানে। দু চোখের ধোয়াঁ মোছার অছিলায় আমি শ্মশানের সীমারেখা পার হয়ে বাইরে এসে দাঁড়াই। সম্রাট তখনও শুঁকছে তোমার মাংস পোড়া সুঘ্রাণ। সম্রাট তোমাকে ভালোবেসেছিল।

                                                               
                                                                     
                                                         উৎসর্গ: শ্রীমতি চক্রবর্তীকে-------সস্নেহ সম্প্রীতিসহ

No comments:

Post a Comment